চকরিয়া টাইমস :
“প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সকলে, একসাথে, এখনই” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন করেছে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি, চকরিয়া। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি, অধিপরামর্শ কার্যক্রম এবং এ সংক্রান্ত বহুমুখী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর দিবসটি সারা বিশ্বে একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয় এবং এ বছর এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ (Ending Plastic Pollution)।
রোববার (১জুন) চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা নিউ মার্কেটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা অপচনশীল প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশের দূষণ, নদী-নালা ও জলাশয়ের দূষণ এবং পলিথিন ব্যাগের বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ইয়েস সদস্য মিশকাতুন্নিছা তৃষার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৫ এর মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সনাক-চকরিয়ার ইয়েস দলনেতা মোহাম্মদ রিয়াদ উদ্দিন।
সনাক-টিআইবি, চকরিয়ার সদস্য মোঃ মহব্বত চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহারে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। প্লাস্টিক দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে এবং একই সাথে নাগরিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে টিআইবি সংশ্লিষ্ট অংশীজনের জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ তুলে ধরছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইএনসিতে (Intergovernmental Negotiating Committee) উত্থাপনের জন্য সুপারিশ: বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কর্তৃক উত্থাপনের জন্য বিষয়সমূহ;
১. প্লাস্টিক দূষণ রোধ-সংক্রান্ত চুক্তিটি দ্রুততার সাথে সম্পাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে, জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব-সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জোরালো দাবি উত্থাপন করতে হবে। এজন্য, বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে একত্রে কাজ করতে হবে;
২. চুক্তির আওতায় ২০৪০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক তৈরিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যরে শতভাগ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের দাবি উত্থাপন করতে হবে;
৩. প্লাস্টিক দূষণ রোধ-সংক্রান্ত চুক্তির আওতায় দেশগুলোকে প্লাস্টিক উৎস থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের তথ্য স্বচ্ছতার সাথে নিরূপণ করতে হবে। সেই তথ্যর ভিত্তিতে এনডিসি’র তথ্য হালনাগাদ ও সংশোধন করে উপস্থাপনের দাবি উত্থাপন করতে হবে;
৪. চুক্তির আওতায় “দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতি” বা Polluter-pays principle – এর ভিত্তিতে, প্লাস্টিক উৎপাদনকারীদের অবদান অনুযায়ী দূষণের দায় দূষণকারীকে গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে।
বাংলাদেশ সরকারের জন্য সুপারিশ
৫. ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে সেই ঘোষণা ২০২৫ সালের আইএনসি সভা থেকে প্রদান করতে হবে;
৬. “ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” কৌশলপত্রটি হালনাগাদ ও সংশোধনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির আলোকে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
৭. প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের ব্যবস্থাসহ একটি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৮. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনসচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে;
৯. প্লাস্টিক শিল্পের জন্য আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রণোদনা হ্রাস করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে উৎসাহিত করতে হবে;
১০. অপ্রাতিষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং প্লাস্টিক-সংক্রান্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হবে;
১১. সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষকরে, ‘উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব’ সম্পর্কিত নির্দেশিকাটির ব্যপক প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে;
১২. যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে;
১৩. নদী, জলাশয় ও পরিবেশের বিভিন্ন উৎসে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণসহ পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
১৪. প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসহ এখাত-সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
উক্ত মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সনাক-টিআইবি, চকরিয়ার সদস্য সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, এসিজি সমন্বয়ক (স্বাস্থ্য) ফরহাদ হোছাইন, এসিজি সদস্য মাসুমুল হাকিম এবং এসিজি সদস্য শ্যামলী জন্নাত ডলি।