“জুলাই ঘোষণাপত্র: কক্সবাজারের জনগণের প্রত্যাশা” শীর্ষক আপ বাংলাদেশের আলোচনা সভা

চকরিয়া টাইমস :

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর আয়োজনে “জুলাই ঘোষণাপত্র: কক্সবাজারের জনগনের প্রত্যাশা” শীর্ষক তাৎপর্যময় এক আলোচনা সভা শনিবার (২১ জুন) কক্সবাজার প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আপ বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় সদস্য মো. রায়হানুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কক্সবাজারের সংগঠক নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আপ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত।

সভায় বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডভোকেট আজিজুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য সাবেক ভিপি শহিদুল আলম বাহাদুর, আপ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সদস্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান মিনহাজুর রহমান রেজবী, রামু উপজেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোহসেন শরীফ, আপ বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় সদস্য যথাক্রমে শেখ স্বপ্নীল হক আদিবা, ফায়াজ শাহেদ, তানভীর আজম, কক্সবাজার জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মীর মোহাম্মদ আবু তালহা, ছাত্রনেতা ও জুলাই যোদ্ধা এম. রুবায়েত আদেল, কক্সবাজার সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এনসিপি সংগঠক মোহাম্মদ ওমর ফারুক, কক্সবাজার ছাত্র অধিকার পরিষকের সংগঠক ইউসুফ বিন নূরী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ নুরুল হক নুর প্রমুখ।

সভায় মাওলানা মহসিন শরীফ বলেন “জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণরা, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণদের সক্রিয় থাকতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের স্বীকৃতি দিতে হবে এবং দুর্নীতি মুক্ত, ধর্মবিদ্বেষমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।”

এডভোকেট আজিজুল ইসলাম বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে চাই যেখানে শোষণ থাকবে না, যেখানে প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে।”

সাবেক ককসু ভিপি শহীদুল আলম বাহাদুর বলেন, “গত ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী আমলে আমরা যারা অধিকারের কথা বলেছি, ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ওপর গুম, হত্যাকান্ড চালিয়েছে। জুলাই পরবর্তীতে সেই পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। সেই পরিবেশ তৈরি করতে, আমাদের এক সাথে কাজ করতে হবে।”

মিনহাজুর রহমান রেজবী বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে সকল জুলাই যোদ্ধা ও সকল শ্রেণির মানুষের প্রত্যাশা প্রতিফলন থাকতে হবে।”

তানভীর আজম বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রই সেই দলিল; যার মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।”

ফায়াজ শাহেদ বলেন, “জুলাইকে ‘বিপ্লব’ বলে স্বীকার করে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করতে হবে।”

শেখ স্বপ্নীল হক আদিবা বলেন, “নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রকে দেখা মানে শুধুমাত্র নীতিগত বিবৃতি নয়; এটি দেখার বিষয় যে ঘোষণাপত্রে নারীর নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কতটা গুরুত্ব পেয়েছে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাফে সালমান রিফাত বলেন, “জুলাই গনঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসক পালিয়ে গেলেও, ফ্যাসিস্ট সংস্কৃতি ও কাঠামো থেকে গেছে। ফলে, এই কাঠামোর মধ্যে যেই আসবে, সেই ফ্যাসিস্ট রুপে আবির্ভূত হবে।জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সেই ফ্যাসিবাদের কাঠামো ভেঙে দিতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে মো: রায়হানুল ইসলাম বলেন, “ইন্টেরিম সরকারকে বলব, কোনো গড়িমসি না করে দ্রুত "জুলাই ঘোষণাপত্র" বাস্তবে রুপ দিতে হবে।”

বক্তারা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কেবল একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়— এটি এক প্রজন্মের রক্ত, শ্রম, এবং ন্যায্যতার দাবি দিয়ে লেখা এক গণ-সংবিধান।এটি বিকেন্দ্রীকরণ, বৈষম্যহীনতা এবং নৈতিক রাষ্ট্রচিন্তার যৌথ খসড়া যার ভিত্তি হচ্ছে ইনসাফ।

বক্তারা ঐক্যমত পোষন করে আরো বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র কেবল রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি একটি বিপ্লবের স্বীকৃতি এবং তা সংবিধানে কার্যকরভাবে প্রতিফলিত করতে হবে।” এই সভা ছিল এক রাজনৈতিক কাব্য, যার প্রতিটি বাক্য ছিল প্রতিরোধের বারুদ। রাষ্ট্র যদি নীরব থাকে, তবে আমরা তার কণ্ঠ হয়ে উঠবো। ইনসাফই হবে আমাদের রাজনীতি। ইনশাআল্লাহ।”

উল্লেখ্য, এটি ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিক আলোচনার ১২ তম পর্ব, যেখানে উঠে আসে অংশীজনের বাস্তব প্রত্যাশা ও রাষ্ট্রচিন্তার সাহসী রূপরেখা। এতে আলেম, শিক্ষক, আইন বিশেষজ্ঞ ও ছাত্রনেতারা উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: